বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন ধরনের রাউটার এবং ব্র্যান্ডের উপস্থিতি বাড়ছে। প্রতিটি রাউটারের সাথে নানা ফিচার যুক্ত থাকে, যার মধ্যে থেকে সবচেয়ে উপযুক্ত রাউটারটি বেছে নেওয়া বেশ কঠিন হতে পারে। স্বাভাবিকভাবে, অধিকাংশ মানুষ দ্রুতগতির এবং ফিচার-সমৃদ্ধ রাউটার খুঁজতে চায়। তবে, এই ধরনের রাউটারগুলো সাধারণত দামি হয়ে থাকে। তবে, কয়েকটি নির্দিষ্ট বিষয় মাথায় রাখলে আপনি সহজেই একটি ভালো এবং সাশ্রয়ী রাউটার বেছে নিতে পারবেন।
মূল বিষয়গুলো যা খেয়াল রাখতে হবে:
১. রাউটারটি অফিস নাকি বাসার জন্য কিনবেন?
২. কতগুলো ডিভাইস রাউটারটি ব্যবহার করবে?
৩. আপনার ইন্টারনেট প্রোভাইডার কত গতির সংযোগ প্রদান করছে?
৪. আপনার কি কোনো নির্দিষ্ট ফিচারের প্রয়োজন?
এখন, একে একে বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।
১. বাসা না অফিস?
রাউটার নির্বাচন করার ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যদি রাউটারটি বাসার জন্য কিনতে চান, তবে সাধারণত বাজারে পরিচিত ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে যেকোনো একটি বেছে নিতে পারেন, যেমন TP-Link, Netgear, Linksys ইত্যাদি। ছোট অফিসের জন্যও একই ধরনের রাউটার ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে বড় অফিসের জন্য, যেখানে আরো উন্নত নেটওয়ার্কিং প্রয়োজন, সেক্ষেত্রে এন্টারপ্রাইজ লেভেল ব্র্যান্ড যেমন Cisco, Juniper, HPE ইত্যাদি বেছে নেওয়া উচিত।
যদি আপনি একটি অ্যাপার্টমেন্টে থাকেন, সাধারণত কোনো সমস্যা হবে না। তবে, ডুপ্লেক্স বা একাধিক তলায় ইন্টারনেট ব্যবহার করলে MESH router অথবা Wi-Fi Extender বা Switch ব্যবহার করতে হতে পারে। ব্যক্তিগতভাবে, আমি Wi-Fi Extender-কে রাউটারের সাথে যুক্ত করে Access Point হিসেবে ব্যবহার করতে পছন্দ করি। মনে রাখবেন, রাউটার এবং Extender-এর মধ্যে দূরত্ব বেশি হলে Switch ব্যবহার করা প্রয়োজন।
২. ডিভাইসের সংখ্যা
বাসায় সাধারণত 5-15 টি ডিভাইস একসাথে যুক্ত হতে পারে, তবে এর চেয়ে বেশি ডিভাইস সংযুক্ত হলে কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে। একটি রাউটারের Wi-Fi পয়েন্টে তাত্ত্বিকভাবে ২৫০টি ডিভাইস সংযুক্ত করা সম্ভব হলেও, এটা মোটেও বাস্তবসম্মত নয়। এর ফলে নেটওয়ার্কের গতি এবং স্থিতিশীলতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বা হবেই বলা যায়। আপনি ডেস্কটপ কম্পিউটার বা স্মার্ট টিভির মতো ডিভাইসগুলো ইথারনেট পোর্ট দিয়ে সরাসরি রাউটারে সংযুক্ত করলে নেটওয়ার্কের চাপ কম হবে। বড় অফিসের ক্ষেত্রে, সুইচ এবং একাধিক Access Point ব্যবহার করা উচিত।
৩. ইন্টারনেটের গতির সঙ্গে সামঞ্জস্য
যদি রাউটারটি শুধুমাত্র ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য কিনছেন, তবে আপনার ইন্টারনেট প্রোভাইডার কত গতির সংযোগ প্রদান করছে তা নিশ্চিত করুন। বাংলাদেশে অধিকাংশ ইন্টারনেট সংযোগ ১০০ Mbps এর নিচে হয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে গিগাবিট (1000 Mbps) রাউটার কিনলে কোনো লাভ হবে না। তবে, যদি আপনি ফাইল শেয়ারিংয়ের জন্যও রাউটার ব্যবহার করতে চান, তাহলে গিগাবিট রাউটার নির্বাচন করা যেতে পারে। বড় অফিসে কিংবা ফাইবার অপটিক সংযোগ ব্যবহারের ক্ষেত্রে গিগাবিট রাউটার এবং সুইচ ব্যবহার করাই যুক্তিযুক্ত।
৪. নির্দিষ্ট ফিচারের প্রয়োজন
রাউটারকে নানা রকম কাজে ব্যবহার করা যায়, যেমন Access Point, Switch বা File Server হিসেবে। যদি বিশেষ কোনো ফিচারের প্রয়োজন থাকে, যেমন ফায়ারওয়াল বা প্যারেন্টাল কন্ট্রোল, তবে সে অনুযায়ী রাউটার নির্বাচন করা উচিত। বিশেষ করে বাসায় ছোট বা উঠতি বয়সের সন্তান থাকলে প্যারেন্টাল কন্ট্রোল ফিচারটি খুবই কার্যকর হতে পারে, যা শিশুদের অযাচিত সাইট পরিদর্শন বা অবৈধ ফাইল ডাউনলোড থেকে রক্ষা করে। এছাড়া, বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষ Wi-Fi এর মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকেন। তবে, আপনার স্মার্টফোন, কম্পিউটার বা স্মার্ট টিভির Wi-Fi প্রটোকল (যেমন: 802.11a/b/g/n/ac/ax) জানাটা জরুরি, যাতে রাউটারের সর্বোচ্চ গতি ও কার্যক্ষমতা নিশ্চিত করা যায়।
এবার ধরুন, আপনি বাজেটের মধ্যে একটি রাউটার কিনেলেন যা Wi-Fi 5 (802.11ac) এবং Wi-Fi 6 (802.11ax) ফিচার আছে। তবে, আপনার ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ কম্পিউটার পুরনো এবং 802.11n পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। এ ক্ষেত্রে, আপনার কম্পিউটারটি সর্বোচ্চ রাউটারের গতি ব্যবহার করতে পারবে না, যদিও ইন্টারনেট সংযোগে কোনো সমস্যা নেই। এই পরিস্থিতিতে, আপনার কম্পিউটারটির নেটওয়ার্ক কার্ড আপগ্রেড করা যেতে পারে। তবে, নতুন স্মার্টফোনগুলিতে সাধারণত ভালো মানের নেটওয়ার্ক কার্ড থাকে, তাই সেখানে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।